এত প্রাণহানির দায় কার
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সংঘাত ও বিপুল প্রাণহানির দায় সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের বলে মনে করে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। কারণ, নির্বাচন কমিশন তার নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগ করেনি। আর সরকারি দল আওয়ামী লীগের দায়, তারা নিজ দলের বিদ্রোহ-বিক্ষোভ দমন করতে পারেনি বলেই সংঘাত হয়েছে।
তবে নির্বাচন কমিশন এ দায় মানতে নারাজ। তারা মনে করে, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি এর জন্য দায়ী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনে করছে, ইউপি নির্বাচন দলের ভেতরে বিভাজন বাড়িয়েছে, করেছে বদনামেরও ভাগীদার।
মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ইউপি নির্বাচন এবং এ নির্বাচন ঘিরে প্রাণহানি সম্পর্কে এই মূল্যায়ন পাওয়া গেছে। গত ২২ মার্চ থেকে ছয় ধাপের ইউপি নির্বাচন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় ৯৯ জনের প্রাণ গেছে। অতীতে আর কোনো ইউপি নির্বাচনে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি বলে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) তথ্য দিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, এর আগে ১৯৮৮ সালে ইউপি নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ৮৮ জনের প্রাণহানি হয়। স্বৈরশাসক এরশাদের ক্ষমতার শেষ দিকে ওই নির্বাচন হয়েছিল।
এখন পর্যন্ত পাঁচ ধাপে ৩ হাজার ২৯০টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণ হয়েছে। আগামী ৪ জুন হবে শেষ ধাপের ভোট। প্রথম পাঁচ ধাপে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা প্রায় ৬৭ শতাংশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী।
প্রশ্ন উঠেছে, দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা নেই। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে সরকার নিজেকে শক্তিশালী মনে করছে। এই পরিস্থিতিতে ইউপি ভোটে বিপুল এই প্রাণহানির কারণ কী? এই প্রশ্নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল তিনটি কারণের কথা বলেছেন। প্রথম কারণ হচ্ছে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও বিদ্রোহী সব প্রার্থীর মধ্যে যেকোনো মূল্যে জয়ের তাড়না। অন্য কারণটি রাজনৈতিক, আর তা হচ্ছে বিরোধী দলের দুর্বল অবস্থান।
আওয়ামী লীগের তিনজন কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা মনে করেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন বলে মাঠপর্যায়ের নেতাদের মধ্যে যেকোনো মূল্যে জয়ী হওয়ার তাড়না তৈরি হয়েছে। এ জন্য মনোনয়ন পেতে প্রার্থীরা টাকা, শক্তি—সবই কাজে লাগিয়েছেন। এতে নানা পক্ষ-প্রতিপক্ষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। শুরুতে বিবদমান পক্ষগুলোকে ভাগে আনার আন্তরিক চেষ্টা করা হয়নি। এ জন্য তারা বেপরোয়া হয়ে সংঘাতে লিপ্ত হয়। তৃতীয় পর্ব থেকে সংঘাত থামাতে বার্তা দেওয়া হলেও তা আমলে নেননি মাঠপর্যায়ের নেতারা। তবে এবারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে সংঘাত কমিয়ে আনা যাবে বলে নেতারা মনে করেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, ইউপি নির্বাচনে পাড়া, মহল্লা ও অঞ্চলভিত্তিক নানা সমস্যা সামনে চলে আসে। আর দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক দলগুলোতেও নানা মেরুকরণ কাজ করেছে। যে সংঘাত ও প্রাণহানি হয়েছে, তা কারোরই কাম্য নয়। সরকার ও আওয়ামী লীগ খুবই আন্তরিক ছিল। প্রথমবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়েছে বলে অভিজ্ঞতার কিছুটা ঘাটতি ছিল। ভবিষ্যতে এর চেয়ে ভালো নির্বাচন হবে।
তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনের পর আসলে দেশে আর নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এরপরও দলীয় প্রতীকে সরকার ইউপি নির্বাচন করে প্রাণহানি উসকে দিয়েছে। সংঘাতের মূলে আওয়ামী লীগ, আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর অংশ। নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এখানে বিরোধী দল সবল না দুর্বল, সে বিষয় নেই। আসলে নির্বাচনের পরিবেশই নেই।
তবে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, সহিংসতার জন্য যারা কমিশনকে দোষারোপ করছে তারাই বলুক, কী করলে হানাহানি বন্ধ হবে। কমিশন সেটাই করবে। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হলে এ দেশে পুলিশ ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’
১৪ দল ও সরকারের শরিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ নিজেরা প্রস্তুত না হয়েই দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী থাকলে এতটা সমস্যা হতো না। সঙ্গে আওয়ামী লীগও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, আসলে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ধারণাটা বুঝতে পারেনি, প্রস্তুতও ছিল না। এ জন্যই বিপুল বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়িয়ে যায় এবং একে অপরের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হয়। এর দায় তাদের ওপর বর্তায়। আর নির্বাচন কমিশন কেন তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করল না, এটা বোধগম্য নয়।
সরকারের শরিক একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল দুজন নেতা বলেন, কেউ দায় নিক আর না নিক, মানুষ তো মারা গেছে। এভাবে মানুষ মেরে তো গণতন্ত্র হতে পারে না। তাঁরা বলেন, নির্বাচন কমিশন পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছে। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। এখন এইচ এম এরশাদ খুশি হতে পারেন এই ভেবে যে গণতান্ত্রিক সরকারও তো তাঁকে ছাড়িয়ে গেছে।
মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, ১৯৮৮ সালের নির্বাচনটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হয়েছে। ওই সময় সব রাজনৈতিক দল এরশাদ ঠেকাতে এককাট্টা ছিল। তখন রাজনৈতিক সংঘাত ও কর্মসূচিও ছিল তুঙ্গে। এরশাদ রাজনৈতিক সংকট ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই একের পর এক স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দিয়েছেন। এ জন্য সংঘাতও হয়েছে।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৮৮ সালের প্রাণহানির সংখ্যা এত নয়। সংঘাত-প্রাণহানি হয়েছে। তবে এবার সবকিছুকে ম্লান করে দিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, কেউ অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করেনি। তারা বলুক যে সরকার তাদের সহায়তা করেনি। আর সরকারি দলের ভূমিকা সঠিক না বেঠিক, এটা বিবেকবান যে কেউ বুঝতে পারে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, এবার ইউপি ভোটে প্রাণহানির যেমন রেকর্ড হয়েছে, তেমনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ারও রেকর্ড হয়েছে। এর দায় পুরোপুরি নির্বাচন কমিশন ও সরকারের। আসলে জয়ী হলেই কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করা যাবে-এই তাড়নার কারণেই সংঘাত।
নির্বাচনে প্রাণহানি ও দায়দায়িত্ব সম্পর্কে জাসদের একাংশের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশন কেউ তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। সবাই মিলে সংঘাতের ভোট-সংস্কৃতি বন্ধ না করতে পারলে মানুষ হতাশ হয়ে পড়বে।
তবে নির্বাচন কমিশন এ দায় মানতে নারাজ। তারা মনে করে, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি এর জন্য দায়ী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনে করছে, ইউপি নির্বাচন দলের ভেতরে বিভাজন বাড়িয়েছে, করেছে বদনামেরও ভাগীদার।
মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ইউপি নির্বাচন এবং এ নির্বাচন ঘিরে প্রাণহানি সম্পর্কে এই মূল্যায়ন পাওয়া গেছে। গত ২২ মার্চ থেকে ছয় ধাপের ইউপি নির্বাচন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় ৯৯ জনের প্রাণ গেছে। অতীতে আর কোনো ইউপি নির্বাচনে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি বলে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) তথ্য দিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, এর আগে ১৯৮৮ সালে ইউপি নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ৮৮ জনের প্রাণহানি হয়। স্বৈরশাসক এরশাদের ক্ষমতার শেষ দিকে ওই নির্বাচন হয়েছিল।
এখন পর্যন্ত পাঁচ ধাপে ৩ হাজার ২৯০টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণ হয়েছে। আগামী ৪ জুন হবে শেষ ধাপের ভোট। প্রথম পাঁচ ধাপে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা প্রায় ৬৭ শতাংশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী।
প্রশ্ন উঠেছে, দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা নেই। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে সরকার নিজেকে শক্তিশালী মনে করছে। এই পরিস্থিতিতে ইউপি ভোটে বিপুল এই প্রাণহানির কারণ কী? এই প্রশ্নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল তিনটি কারণের কথা বলেছেন। প্রথম কারণ হচ্ছে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও বিদ্রোহী সব প্রার্থীর মধ্যে যেকোনো মূল্যে জয়ের তাড়না। অন্য কারণটি রাজনৈতিক, আর তা হচ্ছে বিরোধী দলের দুর্বল অবস্থান।
আওয়ামী লীগের তিনজন কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা মনে করেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন বলে মাঠপর্যায়ের নেতাদের মধ্যে যেকোনো মূল্যে জয়ী হওয়ার তাড়না তৈরি হয়েছে। এ জন্য মনোনয়ন পেতে প্রার্থীরা টাকা, শক্তি—সবই কাজে লাগিয়েছেন। এতে নানা পক্ষ-প্রতিপক্ষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। শুরুতে বিবদমান পক্ষগুলোকে ভাগে আনার আন্তরিক চেষ্টা করা হয়নি। এ জন্য তারা বেপরোয়া হয়ে সংঘাতে লিপ্ত হয়। তৃতীয় পর্ব থেকে সংঘাত থামাতে বার্তা দেওয়া হলেও তা আমলে নেননি মাঠপর্যায়ের নেতারা। তবে এবারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে সংঘাত কমিয়ে আনা যাবে বলে নেতারা মনে করেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, ইউপি নির্বাচনে পাড়া, মহল্লা ও অঞ্চলভিত্তিক নানা সমস্যা সামনে চলে আসে। আর দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক দলগুলোতেও নানা মেরুকরণ কাজ করেছে। যে সংঘাত ও প্রাণহানি হয়েছে, তা কারোরই কাম্য নয়। সরকার ও আওয়ামী লীগ খুবই আন্তরিক ছিল। প্রথমবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়েছে বলে অভিজ্ঞতার কিছুটা ঘাটতি ছিল। ভবিষ্যতে এর চেয়ে ভালো নির্বাচন হবে।
তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনের পর আসলে দেশে আর নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এরপরও দলীয় প্রতীকে সরকার ইউপি নির্বাচন করে প্রাণহানি উসকে দিয়েছে। সংঘাতের মূলে আওয়ামী লীগ, আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর অংশ। নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এখানে বিরোধী দল সবল না দুর্বল, সে বিষয় নেই। আসলে নির্বাচনের পরিবেশই নেই।
তবে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, সহিংসতার জন্য যারা কমিশনকে দোষারোপ করছে তারাই বলুক, কী করলে হানাহানি বন্ধ হবে। কমিশন সেটাই করবে। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হলে এ দেশে পুলিশ ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’
১৪ দল ও সরকারের শরিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ নিজেরা প্রস্তুত না হয়েই দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী থাকলে এতটা সমস্যা হতো না। সঙ্গে আওয়ামী লীগও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, আসলে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ধারণাটা বুঝতে পারেনি, প্রস্তুতও ছিল না। এ জন্যই বিপুল বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়িয়ে যায় এবং একে অপরের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হয়। এর দায় তাদের ওপর বর্তায়। আর নির্বাচন কমিশন কেন তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করল না, এটা বোধগম্য নয়।
সরকারের শরিক একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল দুজন নেতা বলেন, কেউ দায় নিক আর না নিক, মানুষ তো মারা গেছে। এভাবে মানুষ মেরে তো গণতন্ত্র হতে পারে না। তাঁরা বলেন, নির্বাচন কমিশন পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছে। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। এখন এইচ এম এরশাদ খুশি হতে পারেন এই ভেবে যে গণতান্ত্রিক সরকারও তো তাঁকে ছাড়িয়ে গেছে।
মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, ১৯৮৮ সালের নির্বাচনটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হয়েছে। ওই সময় সব রাজনৈতিক দল এরশাদ ঠেকাতে এককাট্টা ছিল। তখন রাজনৈতিক সংঘাত ও কর্মসূচিও ছিল তুঙ্গে। এরশাদ রাজনৈতিক সংকট ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই একের পর এক স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দিয়েছেন। এ জন্য সংঘাতও হয়েছে।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৮৮ সালের প্রাণহানির সংখ্যা এত নয়। সংঘাত-প্রাণহানি হয়েছে। তবে এবার সবকিছুকে ম্লান করে দিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, কেউ অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করেনি। তারা বলুক যে সরকার তাদের সহায়তা করেনি। আর সরকারি দলের ভূমিকা সঠিক না বেঠিক, এটা বিবেকবান যে কেউ বুঝতে পারে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, এবার ইউপি ভোটে প্রাণহানির যেমন রেকর্ড হয়েছে, তেমনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ারও রেকর্ড হয়েছে। এর দায় পুরোপুরি নির্বাচন কমিশন ও সরকারের। আসলে জয়ী হলেই কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করা যাবে-এই তাড়নার কারণেই সংঘাত।
নির্বাচনে প্রাণহানি ও দায়দায়িত্ব সম্পর্কে জাসদের একাংশের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশন কেউ তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। সবাই মিলে সংঘাতের ভোট-সংস্কৃতি বন্ধ না করতে পারলে মানুষ হতাশ হয়ে পড়বে।